উদীয়মান লেখক নাসের সেহ্জাদের গল্পঃ দরিদ্র খাদিজার রাজ কপাল ;( ১ম পর্ব )
লেখক:নাসের সেহ্জাদ
আসমা খাতুন! খুব পরিশ্রমি এক মহিলা। তার একটি মাত্র মেয়ে খাদিজা। খাদিজার যখন ১৬ বছর বয়স তখন তার পিতা আব্বাস উদ্দিন বিরল একটি রোগে মারা যান। কর্তার মৃত্যুর পর আসমা খাতুন একটু চিন্তায় পড়েছেন বটে কিন্তু খাদিজার কথা চিন্তা করে একটু ফোটাও হাল ছাড়েন নি তিনি। মাত্র ক্লাস নিউ টেনে উঠেছেন খাদিজা। খাদিজা দেখতে বেশ সুন্দর। টানা টানা চোখ, লম্বা চিকন বেকানো ব্রু, একটু মোটা সোটা। এক কথায় শ্যাম বরনের একটা সুন্দর মেয়ে। আব্বাস উদ্দিন মৃত্যুর আগে নাকি গ্রামের মোড়লের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করেছিলেন। আব্বাস উদ্দিনের একটি মাত্র টিনের সেট ওয়ালা বাড়ি। ধন, সম্পদ বলতে এই ছোট্ট টিনের সেট মাটির দেওয়াল বাড়ি ছাড়া আর কিছু ছিল না। ওদিকে মোড়ল সাহেব টাকার জন্য আসমা খাতুনের বাড়ি লোক পাঠিয়েছেন। তারা বলে গেছেন, আব্বাস উদ্দিন মৃত্যু আগে ৩০,০০০ হাজার টাকা নাকি ধার নিয়ে ছিল মোড়ল সাহেবের কাছ থেকে। বন্ধোক হিসাবে ছিল তার এই টিনের সেট ওয়ালা বাড়িটি। লোকগুলি এক সপ্তাহ টাইম বেধে দিল আসমা খাতুনকে। তার মধ্যে টাকা না দিলে বাড়ি দখল করে নিবে মোড়ল। না হয় তার সাথে মেয়ে বিয়ে দিতে হবে। আসমা খাতুন ভেবে পাচ্ছে না কি করে টাকা পরিশোধ করবে। আবার সে এটিও ভাবছে, খাদিজার যদি কোন সর্বনাশ করে ফেলে মোড়ল টাকা না দিলে! এসব কথা চিন্তা করতে করতে আসমা খাতুনের ঘুম হারাম হয়ে গেল। চারিদিকে বিশাল একটা টেনশন তাকে ঘিরে রেখেছে। এত টাকা সে কি ভাবে দিবে! বাড়িটা না হয় দিয়ে দিলাম কিন্তু খাদিজার কি হবে! কোথায় থাকবো সেন্না মেয়েটিকে নিয়ে! পরের দিন গ্রামের বিছু লোকের কাছে সে টাকা ধার করতে বের হল। সবাইর একি প্রশ্ন টাকা কোথা থেকে দিবে? কিছু লোক বললো, টাকা দিতে পারি তোমার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে হবে। যদি শর্তে রাজি হও তাহলে টাকা এখনি নিয়ে যাও।
আসমা খাতুন যা ভেবেছিলেন তাই বলছে কিছু লোক। এদিকে খাদিজা স্কুল থেকে এসে দেখলো তার মা আসমা খাতুন বাসাই নাই। সে মনে মনে ভাবলেন, মা তো কখনো বাসা থেকে বের হয় না! আজ হঠাৎ কোথায় গেল। সে কি মোড়ল সাহেবের টাকা যোগাড় করতে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ধরনা ধরতে গেল! খানিক বাদে আসমা বেগম বাসায় এসে উপস্থিত। খাদিজা দেখলো তার মায়ের মুখটি অন্ধকার একগুচ্ছ মেঘে ঢেকে আছে। মা ও মা, কি হয়েছে তোমার? মোড়ল সাহেবের টাকা চাইতে মনে হয় মানুষের বাড়ি গিয়েছিলে? আসমা বেগমের চোখ মুখ টল টল করছে। খাদিজাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেদে ফেললো! খাদিজা রে,, আমরা মনে হয় আর তোর বাবার রেখে যাওয়া বাড়িটি রাখতে পারলাম না! কোথায় যাব রে খাদিজা! এই ভাবে হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকলো দুই মা মেয়ে! সপ্তাহ গড়াতে আর কিছু দিন বাকি। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না আসমা বেগম। তার মাথায় হঠাৎ করে একটি চিন্তা আসলো। মোড়লের ৩০,০০০ হাজার টাকার বদলে যদি বাড়ি লিখে দিতে হয় তবে এর মধ্যে কোন এক ভাল লোকের কাছে বাড়ি বিক্রি করব। যদি কিছু টাকা বেশী বিক্রি করতে পারি তবে খাদিজাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাব। এই সেই ভাবতে ভাবতে ঘুম পড়লো আসমা বেগম।
(পর্ব-১)